কক্সবাজারের চকরিয়ায় একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে দন্ডপ্রাপ্ত জামায়াতে ইসলামীর নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর গায়েবানা জানাজাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের ঘটনায় ভারী অস্ত্র হাতে প্রকাশ্যে গুলি বর্ষণকারিরা কারা এমন প্রশ্ন এখন সকলের মুখে-মুখে। সংঘর্ষ চলাকালিন সময়ে অংশ নেয়া যে কয়েকজনের হাতে ভারী অস্ত্র দেখা গেছে তারা মাথায় হেলমেট পরিহিত ছিলেন। অন্যান্যদের হাতে লাঠি ছিল। যে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে এজনের মৃত্যু এবং ৬ পুলিশ সদস্য সহ আহত হয়েছেন ১৩ জন।
মঙ্গলবার চকরিয়ার লামার চিরিংগায় গায়েবানা জানাজা চালাকালিন সময় এই হামলার ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষে নিহত চকরিয়া পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের আবুল ফজলের ছেলে মোহাম্মদ ফোরকান (৬০) কে জামায়াতকর্মী দাবি করেছে সংগঠনটি।
চকরিয়া-পেকুয়া আসনে জামায়াত মনোনীত সংসদ সদস্য প্রার্থী ও কক্সবাজার শহর আমীর আবদুল্লাহ আল ফারুক জানিয়েছেন, চকরিয়ায়ও গায়েবানা জানাযা শান্তিপূর্ণ উপায়ে সম্পন্ন হয়। যেখানে স্বতঃস্ফূর্তভাবে সাধারণ মানুষ অংশগ্রহণ করেন। জানাযা শেষে বাড়ি ফেরার পথে চকরিয়া পৌরসভায় বায়তুশ শরফ রোডের মাথায় পুলিশ ও আওয়ামীলীগের লোকজন প্রকাশ্যে অস্ত্র উচিয়ে গুলি করে। এতে জামায়াতকর্মী ফোরকান নিহত হন, আহত হন অনেকেই।
তবে নিহত মোহাম্মদ ফোরকান কোনভাবেই জামায়াত কর্মী নন বলে জানিয়েছেন ওই আসনের সংসদ সদস্য জাফর আলম। তিনি জানান, বুধবার আড়াই টার সময় মোহাম্মদ ফোরকানের নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ওখানে তার বড় ভাই বক্তব্য রেখেছেন। বক্তব্যে পরিষ্কারভাবে বলেছেন ফোরকান কোন রাজনীতির সাথে জড়িত নন। তাদের পরিবার এবং স্বজনরা নৌকায় ভোট দেন।
এমপি জাফর বলেন, জানাজায় আমি সহ অনেক মানুষ উপস্থিত ছিলাম। এত কথা বলে যাচ্ছে কিন্তু একজন ব্যক্তির জানাজায় জামায়াত-বিএনপির কোন নেতা কর্মী তো ছিল না। তারা শুধু শান্ত পরিবেশকে অশান্ত করতে পরিকল্পিতভাবে চকরিয়া ও পেকুয়ার ঘটনাটি করেছে। এর নেপথ্যে বিএনপির লোকজন জড়িত। ঘটনায় অস্ত্র হাতে বিএনপি ও ছাত্রদলের নেতা-কর্মীদের দেখা গেছে।
চকরিয়ার সংঘর্ষের হেলমেট পড়ে অস্ত্র, লাঠি নিয়ে সংঘর্ষে অংশ নেয়ার ঘটনায় নেতৃত্বদানকারি পৌর আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক লায়ন আলমগীর বলে দাবি করছেন কক্সবাজার শহর আমীর আবদুল্লাহ আল ফারুক।
এব্যাপারে লায়ন আলমগীরের সাথে যোগাযোগ করা হলে ফোনে সংযোগ পাওয়া যায়নি। তবে এমপি জাফর আলম বলেন, জামায়াত মিথ্যাচার করছে। কোন কারণ ছাড়া পরিকল্পিতভাবে পরিস্থিতি ঘোলাটে করার চেষ্টা করা হচ্ছে। আওয়ামীলীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ সহ অঙ্গ সংগঠনের কেউ ঘটনাস্থলে ছিলেন না। শোক দিবসের কর্মসূচি, বন্যা কবলিতদের ত্রাণ সহায়তায় ব্যস্ত ছিলেন সকলেই। পুলিশের উপর হামলা হচ্ছে জেনেই ঘটনাস্থলে আমি সহ নেতা-কর্মী ঘটনাস্থলে আছি। পুলিশ সাথে নিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনি।
চকরিয়া থানা ওসি জাবেদ মাহমুদ জানিয়েছেন, পুলিশ কোনভাবেই গুলি বর্ষণ করেনি। বরং পুলিশের গাড়িতে হামলা, ভাংচুর চালানো হয়েছে। ঘটনায় আহত হয়েছেন তিনি সহ পুলিশের ৬ সদস্য। ঘটনায় জড়িতদের শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে। অস্ত্র হাতে থাকা ব্যক্তি কারা তাও তদন্ত করে বের করা হবে। এ ঘটনায় পুলিশের পক্ষে মামলার প্রক্রিয়া চলছে বলে জানান তিনি।
কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মো. মাহাফুজুল ইসলামও বলেন, চকরিয়ার ঘটনায় গুলি বর্ষণ পুলিশের পক্ষে করা হয়নি। এ ঘটনায় মামলার প্রক্রিয়া চলছে। পরে কারা গুলি বর্ষণ করেছেন তদন্ত করা হচ্ছে।
চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জেপি দেওয়ান জানিয়েছেন, সংঘর্ষের ঘটনাটি নিজেদের মধ্যে কিনা তদন্ত করা হচ্ছে। স্বাভাবিক পরিস্থিতি ঘোলাটে করতে নিজেরাই এমন ঘটনা ঘটানোর বিষয়টি একে বারেই উড়িয়ে দেয়া যাচ্ছে না।
পাঠকের মতামত